আমার ব্লগ

Zekr : শক্তিশালী কুরআন সফটওয়্যার ও তার বাংলা এক্সটেনশন : ইন্সটলেশন ও ব্যবহারবিধি

মাকতাবা শামেলার কল্যানে আরবি তাফসির, হাদিস, ফিকহ, সিরাত, ইতিহাস, জীবনী ইত্যাদি গ্রন্থাদি মাউসের ক্লিকের সাথেই এক্সেস করা যাচ্ছে। খোঁজা যাচ্ছে সব গ্রন্থে একসঙ্গে, কিংবা, পৃথক ভাবে। চল্লিশ, পঞ্চাশ খন্ড সম্বলিত কিতাবের পৃষ্ঠা খুঁজে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল বের করে আনা এখন মুহূর্তের ব্যাপার।

বাংলায় এরকম কিছু আশা করছিলাম অনেক দিন ধরেই। অন্তত, কুরআন শরীফের শুধু অনুবাদটা যদি এভাবে পাওয়া যেত! যদি তাতে বাংলা লিখে সার্চ করে আরবী আয়াত সহ পেয়ে যেতাম, আবার আরবি লিখে সার্চ করে বাংলা অনুবাদ সহ পেয়ে যেতাম! সে আশাই করতাম এত দিন।

এর মধ্যে যে একটি সফটওয়্যারও সে রকম সুবিধা দিতে পারে নি, তা কিন্তু বলছি না। বছর পাঁচেক আগে জাকারিয়া ভাইয়ার মা‘আরেফুল কুরআন সফটওয়্যারটি সর্বপ্রথম সে সুবিধা নিয়ে এসেছিল। তখন ছিলাম আবুধাবীতে। যতদূর মনে পড়ে, জাকারিয়া ভাইয়ার সফটওয়্যারটির উদ্বোধন আবুধাবীতেই হয়েছিল। বিভিন্ন তাফসীর মাহফিল, ইফতার পার্টি ও বাঙালীদের সমাবেশে তার সফটওয়্যারটির সিডি পাওয়া যেত। আমার কপিটি জাকারিয়া ভাইয়ার পক্ষ থেকে ‘হাদিয়া’ ছিল।

সে সময় খুব খুশি হয়েছিলাম আমি। সফটওয়্যারটি দিয়ে বাংলা বিজয় অক্ষরে লিখে সার্চ করা যেত কুরআনের বাংলা অনুবাদে। যেমন, ‘নামায’ লিখে সার্চ করলে কুরআন শরিফের অনুবাদে কত জায়গায় ‘নামায’ শব্দটি আছে, কোন কোন সুরায় আছে, তা জানিয়ে দিত সফটওয়্যারটি। আর সিডি ঢুকিয়ে চালালে আরবি আয়াতটাও জানা যেত, তবে তা ছিল ইমেজ ফরম্যাটে। যার কারণে আরবি লিখে সার্চ করার কোনো অপশন ছিল না তাতে।

সফটওয়্যারটিতে আর কী কী সংযোজন করা যায়, জাকারিয়া ভাইয়া জানতে চেয়েছিলেন। আমি বলেছিলাম, আরবি লিখে সার্চ করার অপশনটা খুব দরকার। এটা হলে সফটওয়্যারটি পরিপূর্ণ হবে বলে মনে করি। পরের ভার্সনে তিনি কুরআন তেলাওয়াত সংযোজন করেছিলেন, ইন্টারফেস কিছুটা মডিফাই করেছিলেন, কিন্তু আরবিটা তখনো সংযোজন করা হয় নি।

এরপর অজানা কারণে সফটওয়্যারটির পরবর্তী ডেভেলপমেন্ট বন্ধ থাকে। গত কয়েক বছর এভাবেই পার হল। এরই মধ্যে আরেকটি মা’আরেফুল কুরআন সফটওয়্যার ইন্টারনেটে পেলাম। কিন্তু, এর সীমাবদ্ধতা আরো বেশি ছিল। কোনো টেক্সট এর ভেতর থেকে কপি করা যেত না।

গত বছরের মাঝামাঝি খোঁজ পেলাম ওপেন সোর্স সফটওয়্যার ‘Zekr‘ এর। ওপেন সোর্স বলে আবারও স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম আমি। ক্রমেই বিভিন্ন ভাষার অনুবাদ এতে যুক্ত হচ্ছে দেখে ভালো লাগত।

আইডি ফোরামে এ সম্পর্কিত একটি টপিকে আলোচনা প্রসঙ্গে স্বদেশী ডেভেলপারদের ‘Zekr‘ এর বাংলা অনুবাদ এক্সটেনশন তৈরির জন্য আহ্বান জানালাম। জানি না সে আহ্বান কাউকে ছুঁতে পেরেছিল কি না। এরপর বেশ কদিন Zekr এর এক্সটেনশন সাইটে গিয়ে বাংলা অনুবাদ খুঁজেছি। কিন্তু অন্যান্য ভাষায় অনুবাদের ভিড়ে বাংলার কোনো খোঁজ না পেয়ে হতাশ হতে হত বরাবর।

‘Zekr‘এর সবচেয়ে ভালো দিক এর সহজ ইন্টারফেস। এরপর আরবিসহ অন্য ভাষায় অনুবাদে খোঁজার সুবিধা। আবার সার্চ স্ক্রীণ থেকে সহজেই মূল আয়াতে ফেরার ব্যবস্থা। সঙ্গে আয়াত ও সূরা নম্বরসহ সার্চ রেজাল্ট ডিসপ্লে। যাতে সহজেই রিসার্চ করতে পারেন ব্যবহারকারীরা। তার ওপর এটি ওপেন সোর্স, কাজেই একদম ফ্রী!

ওপেন সোর্স বলে বাঙালী কেউ না কেউ এগিয়ে আসবেই -এ স্বপ্ন ছিল জোরালো। অবশেষে ভাষার মাস ‘ফেব্রুয়ারির’ শুরুর দিকে ‘Zekr‘-এর এক্সটেনশন সাইটে ঢুঁ মারতেই চোখে পড়ল বাংলা অনুবাদ এক্সটেনশন। যদিও সেটা কেবল মা’আরেফুল কুরআনের। কিন্তু তাতে কি! বাংলা এসেছে, এতেই আমি খুশি। কে করেছেন জানি না, তবে অন্তর থেকে দোয়া রইল তার জন্য। আশা করি সামনে বাংলার অন্যান্য অনুবাদগুলোও চলে আসবে সেখানে।

এই পোষ্টটিতে মূলত ‘Zekr‘ কীভাবে ইন্সটল ও ব্যবহার করতে হবে সে দিকে আলোকপাত করা হবে।

প্রথম ধাপ : Zekr ডাউনলোড ও ইন্সটল :

‘Zekr‘ ইন্সটল করতে আপনার জাভা রানটাইম -এর প্রয়োজন হবে। এখান থেকে তা ডাউলোড করে ইন্সটল করে নিন। আপনার পিসিতে পূর্বে থেকেই তা থাকলে নতুন করে ডাউনলোড করার প্রয়োজন নেই।

এরপর ‘Zekr‘ ডাউনলোড করে নিন। লিংক : http://zekr.org/quran/quran-for-windows ।এখান থেকে ‘ডাউনলোড’ -এ ক্লিক করে সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করে নিন। এরপর স্বাভাবিক নিয়মেই তা ইন্সটল করুন।

দ্বিতীয় ধাপ : বাংলা অনুবাদ ডাউনলোড ও ইন্সটল :

http://zekr.org/download/trans/muhiuddinkhan.trans.zip -এই লিংক থেকে বাংলা মা’আরেফুল কুরআনের অনুবাদটি ডাউনলোড করে নিন। এরপর ‘Zekr‘ ওপেন করে Tools>Add>Translation এ ক্লিক করুন।

তারপর বাংলা Translation ফাইলটি যেখানে ডাউনলোড করেছেন, সে জায়গাটি নির্দেশ করুন। ব্যস, বাংলা অনুবাদটি ইন্সটল হয়ে যাবে।

তৃতীয় ধাপ : Translation হিসেবে বাংলাকে ডিফল্ট সেট করা :

View>Translation>bn_BD মাওলানা মুহিউদ্দীন খান -সিলেক্ট করুন।

ব্যস, বাংলা অনুবাদ আপনার সফটওয়্যারে ডিফল্ট হিসেবে থাকবে। এরপর কখনো ইংরেজি অনুবাদ দেখার প্রয়োজন হলে একই নিয়মে ইংরেজি অনুবাদ সিলেক্ট করে নিন।

চতুর্থ ধাপ : বাংলা অনুবাদের ফন্ট ও সাইজ ঠিক করা :

Tools>Options>View এ ক্লিক করুন। চিত্রের মতো করে শেষ দুটি ভ্যালু যুক্ত করুন।

ভ্যালু দুটি যুক্ত করতে প্রথমে নিচে Add (+) ক্লিক করুন। নতুন উইন্ডো আসবে। সেখানে নিচের চিত্রের মতো করে ‘trans_bn_fontName’ লিখুন। এরপর Ok দিন।

একই ভাবে আরেকটি ভ্যালু যোগ করুন। Add এ ক্লিক করে ‘trans_bn_fontSize’ লিখে Ok দিন।

এরপর trans_bn_fontName এর ডানে ‘Value’ ঘরে ক্লিক করে ‘SolaimanLipi’ লিখুন। আর ‘trans_bn_fontSize’ এর ডানে ‘Value’ ঘরে ‘12′ লিখুন। এরপর Apply দিয়ে Ok দিন। বাংলা ফন্টগুলো এখন স্মুথ দেখাবে।

তবে হ্যাঁ, Solaiman Lipi ফন্টটি আপনার সিস্টেমে না থাকলে অন্য কোনো ইউনিকোড ফন্ট নির্দেশ করতে পারেন। আবার যে ফন্ট আছে তা রেখেই শুধু সাইজ বড় করে নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কেবল দ্বিতীয় ভ্যালুটি Add করলেই হবে।

পঞ্চম ধাপ : ব্যবহার :

এই সফটওয়্যারটি বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করতে পারবেন আপনি।

১. বাঁ পাশ থেকে সূরা ও আয়াত সিলেক্ট করে Go ক্লিক করুন।

২. বাঁ পাশে নিচে Search বক্সে Quran সিলেক্ট করে আরবিতে লিখে সার্চ করতে পারেন।

ফলাফল :

৩. Search বক্সে Translation সিলেক্ট করে বাংলায় লিখে সার্চ করতে পারেন।

ফলাফল :

৪. সার্চ রেজাল্টে আরবি ও অনুবাদে আয়াতের শেষে সূরার নাম ও আয়াত নম্বরের ওপর মাউস ধরলে রেফারেন্সে ব্যবহারের জন্য সূরা ও আয়াতের সংখ্যাদ্বয় দেখতে পাবেন।

৫. আবার তাতে ক্লিক করলে সংশ্লিষ্ট সুরার সংশ্লিষ্ট আয়াতে চলে যাবেন।

এছাড়া আরো বিভিন্ন ভাবে সফটওয়্যারটি থেকে উপকৃত হতে পারবেন। আশা করি এর মাধ্যমে কুরআন সহজে বোঝা, কুরআন নিয়ে গবেষণা করা এবং তার উপর আমল করা সহজ হবে। আল্লাহ তায়ালা এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উত্তম প্রতিদান দিন। আমীন।

————————-

Zekr, জাভা এবং সোলাইমানলিপি একসঙ্গে : Zekr_Al-Quran_all


শূকরের চর্বির তৈরি খাদ্যদ্রব্য ও প্রসাধন ব্যবহারে সতর্ক হোন
ড. আফম খালিদ হোসেন
খাদ্যসহ ব্যবহার্য সব সামগ্রীতে হালাল-হারাম যাচাই করে কর্তব্য ঠিক করা মুসলমান মাত্রেরই দায়িত্ব। অনেক সময় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শুধু অজ্ঞতার কারণে আমরা হারাম দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকি। অথচ এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা লাভ করা এবং এসব থেকে বিরত থাকা আমাদের জন্য জরুরি। এ পর্যায়ে বিভিন্ন পণ্যে শুকুরের চর্বির মিশ্রণ সম্পর্কে আলোকপাত করা হচ্ছে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশেষত ইউরোপ, আমেরিকা, পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় শূকরের চর্বি (LARD, PIG FAT) খাদ্যদ্রব্য রান্না ও প্রসাধন সামগ্রী তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে দামে সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে বাটার অয়েলের পরিবর্তে রান্নায় শূকরের চর্বি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে রান্নার পাশাপাশি রুটি, পিজা, পিঠা, কেক, স্ন্যাক্স, সস, স্যান্ডউইচ, বার্গার, বিস্কুট, মিষ্টি ও ঝাল খাবারে শূকরের চর্বির ব্যাপক ব্যবহার লক্ষণীয়। এছাড়াও সাবান, লোশন, চকোলেট, চিপস, শ্যাম্পু, লিপস্টিক, ক্যান্ডি, শেভিং ক্রিম, অয়েন্টমেন্ট তৈরিতে শূকরের চর্বি অপরিহার্য উপাদান। এসব খাদ্য ও কসমেটিকস সামগ্রীতে যে আঁঠালো পদার্থ আছে তার বৈজ্ঞানিক নাম Gelatin। এটা শূকরের হাড় ও পায়ের খুরের চর্বি থেকে সংগৃহীত হয়। শূকরের চর্বি সয়াবিন তেল, মারকারাইন ও ভেজিটেবল ফ্যাটের মতো স্বাস্থ্যসম্মত না হলেও খাদ্যদ্রব্য ফ্রাইংয়ের ক্ষেত্রে যে গন্ধটি বের হয় তা পাশ্চাত্যের ভোক্তাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। শূকরের দেহের যে কোনো অংশের Fatty tissue থেকে চর্বি আহরণ করা যায় এবং এসব চর্বির নানা গ্রেড রয়েছে। তার মধ্যে কিডনি ও মাংসপেশির আশপাশের চর্বির কদর বেশি। কিডনি থেকে প্রস্তুত চর্বির বাণিজ্যিক নাম হলো Leaf Lard.
বিবিসি পরিবেশিত খবরে জানা যায়, ইউক্রেনে সালু (Salo) নামে একটি চকলেট বেশ জনপ্রিয়। ভেতরে লবণাক্ত এবং বাইরে মিষ্টি এসব চকলেট তৈরি হয় শূকরের চর্বি দিয়ে। পুরো ইউরোপে হৃদরোগের ক্ষেত্রে ইউক্রেনের অবস্থান শীর্ষে। অন্যান্য পশুর তুলনায় শূকরের চর্বিতে কোলেস্টেরলের মাত্রা অত্যধিক। ১০০ মিলিগ্রাম শূকরের মাংসে কোলেস্টেরলের পরিমাণ ৯২ মিলিগ্রাম। শূকরের মাংস পরজীবী ভাইরাস বহন করে। শূকরভোজীরা সব সময় মারাত্মক শারীরিক ঝুঁকির মধ্যে থাকে। ১৯৪৩ সালে আমেরিকান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের বিশেষজ্ঞরা এক প্রতিবেদনে অভিমত প্রকাশ করেন যে, আমেরিকায় প্রতি ৬ জনে ১ জন Trichinosis রোগে আক্রান্ত হয়ে উন্মাদ হয়ে পড়ে।
পাশ্চাত্যের বহু দেশে বাণিজ্যিকভাবে শূকর উত্পাদিত হয়। শূকর উত্পাদন ও বিপণন তাদের আয়ের এক বিরাট উত্স। ফ্রান্সে ৪২ হাজার এবং আমেরিকার নর্থ ক্যারোলিনায় এক লাখ শূকরের খামার রয়েছে। আমেরিকায় দৈনিক খাবারের তালিকায় শূকরের মাংস অপরিহার্য অনুষঙ্গ। ৭৫ ভাগ শুকর মাংস খাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়, বাকি ২৫ ভাগ শূকরের মাংস আগুনে গলিয়ে চর্বি বের করা হয়। টিনজাত করা শূকরের চর্বি (LARD) বাজারে সহজলভ্য। Silver ষবধভ ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত শূকরের চর্বি ব্রিটেনে বেশ জনপ্রিয়। বাবা ও দু’ছেলের ছবিসহ দেয়ালে সাঁটানো একটি পোস্টারে লেখা আছে—‘তারা সুখী যেহেতু তারা শূকরের চর্বি খায়’ (They are happy, Because they eat Lard)।
ইউরোপীয় দেশগুলোতে বাজারজাতকৃত যে কোনো খাদ্যদ্রব্য ও প্রসাধন সামগ্রীর প্যাকেটে প্রস্তুতকরণের মূল উপাদান Ingredients উল্লেখ থাকা বাধ্যতামূলক। এটা রাষ্ট্রের স্বীকৃত আইন। শূকরের চর্বি দিয়ে আগে যেসব সামগ্রী তৈরি হতো তাতে চরম ভধঃ লেখা থাকত। এতে ইউরোপীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় ভোক্তাদের কোনো অসুবিধে হতো না। কিন্তু বহুজাতিক কোম্পানি কর্তৃক প্রস্তুতকৃত এসব সামগ্রী যখন মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হতে থাকে, চরম ভধঃ (শূকরের চর্বি) লেখা থাকার কারণে মুসলমান ও নিরামিষভোজীরা এসব সামগ্রী ব্যবহার থেকে বিরত থাকেন। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে তাদের বৈদেশিক বাণিজ্য ৭৫ ভাগ হ্রাস পায়। উল্লেখ্য, ইসলামে শূকরের মাংস ও চর্বি ভক্ষণ হারাম। বহুজাতিক কোম্পানি তাদের দেশের খাদ্য প্রশাসন বিভাগের সহায়তায় ব্যবসায়িক স্বার্থে উপাদানের ক্ষেত্রে সরাসরি চরম ভধঃ (শূকরের চর্বি) না লিখে ইদানীং ই-কোড্স (E-codes) ব্যবহার করতে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মেডিকেল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডা. আমজাদ আলী খান জানিয়েছেন, যেসব পণ্যের প্যাকেটে নিম্নলিখিত E-CODES লেখা থাকবে নিঃসন্দেহে সেখানে শূকরের চর্বি থাকবে। খাদ্য ও প্রসাধন সামগ্রী কেনার সময় ভালোভাবে যাচাই করে নিতে হবে। তাহলেই আমরা হারাম থেকে বাঁচতে পারব।
E100, E110, E120, E140, E141, E153, E210, E213, E214, E216, E234, E252, E270, E280, E325, E326, E327, E334, E335, E336, E337, E422, E430, E431, E432, E433, E434, E435, E436, E440, E470, E471, E472, E473, E474, E475, E476, E477, E478, E481, E482, E483, E491, E492, E493, E494, E495, E542, E570, E572, E631, E635, E904.
উল্লেখ্য, পবিত্র কোরআনে শূকরের গোশত হারাম হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম কুরতুবির উদ্ধৃতি দিয়ে আল্লামা মুফতি শফি (রহ.) বলেন, এর দ্বারা শুধু গোশত হারাম একথা বোঝানো উদ্দেশ্য নয়। বরং শূকরের সমগ্র অংশ তথা হাড়, গোশত, চামড়া, চর্বি, রগ, পশম প্রভৃতি সবকিছুই সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। তবে ‘লাহ্ম’ তথা গোশত যোগ করে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, শূকর অন্যান্য হারাম জন্তুর মতো নয়, তাই এটি জবাই করলেও পাক হয় না। কেননা, গোশত খাওয়া হারাম এমন অনেক জন্তু রয়েছে যাদের জবাই করার পর সেগুলোর হাড়, চামড়া প্রভৃতি পাক হয়ে যায়। কিন্তু জবাই করার পর শূকরের গোশত হারাম তো বটেই, নাপাকও থেকে যায়। কেননা, এটি একাধারে যেমনি হারাম তেমনি ‘নাজাসে আইন’ বা সম্পূর্ণ নাপাক। শুধু চামড়া সেলাই করার কাজে শূকরের পশম দ্বারা তৈরি সুতা ব্যবহার করা জায়েয বলে হাদিসে উল্লিখিত হয়েছে (সংক্ষিপ্ত মা’আরিফুল কোরআন, মদিনা, ১৪১৩ হি., পৃ. ৮৮)।
পবিত্র কোরআনের খ্যাতনামা ইংরেজি অনুবাদক ও ভাষ্যকার আল্লামা আবদুল্লাহ ইউসুফ আলী (রহ.) সূরা বাকারার ১৭৩ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, শূকরের বসবাস মূলত আবর্জনাপূর্ণ জায়গায় এবং ময়লা তার খাবার। যদি কোনো শূকরকে পরিচ্ছন্ন জায়গায় রেখে কৃত্রিম খাদ্য খাওয়ানো হয় তাহলেও তার স্বভাব ও প্রকৃতি বদলায় না। তিনি মন্তব্য করেন, They are filthy animals in other respects, and the flesh of filthy animals taken as a food affects the eater; the swine flesh has more fat than muscle building material and that is more liable to disease than other kinds of meat; e.g., Trichinosis, characterized by hair-like worms in muscular tissue.
“শূকর অন্য দিক দিয়েও নোংরা প্রাণী এবং নোংরা প্রাণীর মাংস খাদ্য হিসেবে গ্রহণকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাংসপেশি গঠনের যেসব উপাদান রয়েছে তার মধ্যে শূকরের মাংসে চর্বির পরিমাণ অধিক। অন্যান্য প্রাণীর মাংসের তুলনায় শূকরের মাংসপেশির টিস্যুতে চুলের মতো ক্ষুদ্র Trichinosis নামক ব্যাধির ভাইরাস থাকায় অধিক হারে রোগ ছড়াতে পারে (The Holy Quran-English Translation of the meanings and Commentary, Madinah, 1410 H., p. 69) l
লেখক : অধ্যাপক, গবেষক, প্রাবন্ধিক


বিসর্জন
In: জীবনমুখী কবিতা, বিরহের কবিতা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

দুইটি কোলের ছেলে গেছে পর পর
বয়স না হতে হতে পুরা দু বছর।
এবার ছেলেটি তার জন্মিল যখন
স্বামীরেও হারালো মল্লিকা। বন্ধুজন
বুঝাইল--- পূর্বজন্মে ছিল বহু পাপ,
এ জনমে তাই হেন দারুণ সন্তাপ।
শোকানলদগ্ধ নারী একান্ত বিনয়ে
অজ্ঞাত জন্মের পাপ শিরে বহি লয়ে
প্রায়শ্চিত্তে দিল মন। মন্দিরে মন্দিরে
যেথা সেথা গ্রামে গ্রামে পূজা দিয়া ফিরে।
ব্রতধ্যান-উপবাসে আহ্নিকে তর্পণে
কাটে দিন ধূপে দীপে নৈবেদ্যে চন্দনে,
পূজাগৃহে; কেশে বাঁধি রাখিল মাদুলি
কুড়াইয়া শত ব্রাহ্মণের পদধূলি;
শুনে রামায়ণকথা; সন্ন্যাসী-সাধুরে
ঘরে আনি আশীর্বাদ করায় শিশুরে।
বিশ্বমাঝে আপনারে রাখি সর্ব-নীচে
সবার প্রসন্ন দৃষ্টি অভাগী মাগিছে
আপন সন্তান-লাগি; সূর্য চন্দ্র হতে
পশুপক্ষী পতঙ্গ অবধি--- কোনোমতে
কেহ পাছে কোনো অপরাধ লয় মনে,
পাছে কেহ করে ক্ষোভ, অজানা কারণে
পাছে কারো লাগে ব্যথা, সকলের কাছে
আকুল বেদনা-ভরে দীন হয়ে আছে।

যখন বছর-দেড় বয়স শিশুর---
যকৃতের ঘটিল বিকার; জ্বরাতুর
দেহখানি শীর্ণ হয়ে আসে। দেবালয়ে
মানিল মানত মাতা, পদামৃত লয়ে
করাইল পান, হরিসংকীর্তন-গানে
কাঁপিল প্রাঙ্গণ। ব্যাধি শান্তি নাহি মানে।
কাঁদিয়া শুধালো নারী, ``ব্রাহ্মণঠাকুর,
এত দুঃখে তবু পাপ নাহি হল দূর!
দিনরাত্রি দেবতার মেনেছি দোহাই,
দিয়েছি এত যে পূজা তবু রক্ষা নাই!
তবু কি নেবেন তাঁরা আমার বাছারে!
এত ক্ষুধা দেবতার! এত ভারে ভারে
নৈবেদ্য দিলাম খেতে বেচিয়া গহনা,
সর্বস্ব খাওয়ানু তবু ক্ষুধা মিটিল না!'
ব্রাহ্মণ কহিল, ``বাছা, এ যে ঘোর কলি।
অনেক করেছ বটে তবু এও বলি---
আজকাল তেমন কি ভক্তি আছে কারো?
সত্যযুগে যা পারিত তা কি আজ পারো?
দানবীর কর্ণ-কাছে ধর্ম যবে এসে
পুত্রেরে চাহিল খেতে ব্রাহ্মণের বেশে,
নিজ হস্তে সন্তানে কাটিল; তখনি সে
শিশুরে ফিরিয়া পেল চক্ষের নিমেষে।
শিবিরাজা শ্যেনরূপী ইন্দ্রের মুখেতে
আপন বুকের মাংস কাটি দিল খেতে---
পাইল অক্ষয় দেহ। নিষ্ঠা এরে বলে।
তেমন কি এ কালেতে আছে ভূমণ্ডলে?
মনে আছে ছেলেবেলা গল্প শুনিয়াছি
মার কাছে--- তাঁদের গ্রামের কাছাকাছি
ছিল এক বন্ধ্যা নারী, না পাইয়া পথ
প্রথম গর্ভের ছেলে করিল মানত
মা-গঙ্গার কাছে। শেষে পুত্রজন্ম-পরে,
অভাগী বিধবা হল; গেল সে সাগরে,
কহিল সে নিষ্ঠাভরে মা-গঙ্গারে ডেকে,
`মা, তোমারি কোলে আমি দিলাম ছেলেকে---
এ মোর প্রথম পুত্র, শেষ পুত্র এই,
এ জন্মের তরে আর পুত্র-আশা নেই।'
যেমনি জলেতে ফেলা, মাতা ভাগীরথী
মকরবাহিনী-রূপে হয়ে মূর্তিমতী
শিশু লয়ে আপনার পদ্মকরতলে
মার কোলে সমর্পিল।--- নিষ্ঠা এরে বলে।

মল্লিকা ফিরিয়া এল নতশির ক'রে,
আপনারে ধিক্কারিল--- ``এত দিন ধরে
বৃথা ব্রত করিলাম, বৃথা দেবার্চনা---
নিষ্ঠাহীনা পাপিষ্ঠারে ফল মিলিল না।

ঘরে ফিরে এসে দেখে শিশু অচেতন
জ্বরাবেশে; অঙ্গ যেন অগ্নির মতন।
ঔষধ গিলাতে যায় যত বার বার
পড়ে যায়--- কণ্ঠ দিয়া নামিল না আর।
দন্তে দন্তে গেল আঁটি। বৈদ্য শির নাড়ি
ধীরে ধীরে চলি গেল রোগীগৃহ ছাড়ি।
সন্ধ্যার আঁধারে শূন্য বিধবার ঘরে
একটি মলিন দীপ শয়নশিয়রে,
একা শোকাতুরা নারী। শিশু একবার
জ্যোতিহীন আঁখি মেলি যেন চারি ধার
খুঁজিল কাহারে। নারী কাঁদিল কাতর---
``ও মানিক, ওরে সোনা, এই-যে মা তোর,
এই-যে মায়ের কোল, ভয় কী রে বাপ।
বক্ষে তারে চাপি ধরি তার জ্বরতাপ
চাহিল কাড়িয়া নিতে অঙ্গে আপনার
প্রাণপণে। সহসা বাতাসে গৃহদ্বার
খুলে গেল; ক্ষীণ দীপ নিবিল তখনি;
সহসা বাহির হতে কলকলধ্বনি
পশিল গৃহের মাঝে। চমকিল নারী,
দাঁড়ায়ে উঠিল বেগে শয্য়াতল ছাড়ি;
কহিল, ``মায়ের ডাক ঐ শোনা যায়---
ও মোর দুখীর ধন, পেয়েছি উপায়---
তোর মার কোল চেয়ে সুশীতল কোল
আছে ওরে বাছা।

জাগিয়াছে কলরোল
অদূরে জাহ্নবীজলে, এসেছে জোয়ার
পূর্ণিমায়। শিশুর তাপিত দেহভার
বক্ষে লয়ে মাতা, গেল শূন্য ঘাট-পানে।
কহিল, ``মা, মার ব্যথা যদি বাজে প্রাণে
তবে এ শিশুর তাপ দে গো মা, জুড়ায়ে।
একমাত্র ধন মোর দিনু তোর পায়ে
একমনে। এত বলি সমর্পিল জলে
অচেতন শিশুটিরে লয়ে করতলে
চক্ষু মুদি। বহুক্ষণ আঁখি মেলিল না।
ধ্যানে নিরখিল বসি, মকরবাহনা
জ্যোতির্ময়ী মাতৃমূর্তি ক্ষুদ্র শিশুটিরে
কোলে করে এসেছেন, রাখি তার শিরে
একটি পদ্মের দল। হাসিমুখে ছেলে
অনিন্দিত কান্তি ধরি দেবী-কোল ফেলে
মার কোলে আসিবারে বাড়ায়েছে কর।
কহে দেবী, ``রে দুঃখিনী, এই তুই ধর্,
তোর ধন তোরে দিনু। রোমাঞ্চিতকায়
নয়ন মেলিয়া কহে, ``কই মা... কোথায়!...
পরিপূর্ণ চন্দ্রালোকে বিহ্বলা রজনী;
গঙ্গা বহি চলি যায় করি কলধ্বনি।
চীত্‍‌কারি উঠিল নারী, ``দিবি নে ফিরায়ে!
মর্মরিল বনভূমি দক্ষিণের বায়ে।


ইদানিং অনেকেই নালিশ জানাচ্ছেন যে তারা নতুন জিমেইল একাউন্ট খুলতে পারছেন না, মোবাইল ফোন দিয়ে SMS কোড পেয়ে তার পরে ফেরিফাই করতে হচ্ছে। অনেকেই নালিশ জানাচ্ছেন যে মোবাইল ফোন দিয়ে কেবল মাত্র সীমিত কিছু জিমেইল একাউন্ট বানানো যাচ্ছে। একটি মোবাইল নম্বরে কতোগুলি জিমেইল বানানো যাচ্ছে তার সঠিক সংখ্যা আপাতত আমি জানিনা, তবে সীমিত সংখ্যার জিমেইলই বানানো যাবে একটি নম্বর দিয়ে। কারো বা আবার মোবাইল ফোন না থাকার কারনে তিনি একাউন্ট বানাতেই পারছেন না। এই ঘটনার শুরুতে জিমেইল ইনভাইট দিয়ে একাউন্ট বানানো যাচ্ছিলো, তখন মোবাইল ফোন দিয়ে ফেরিফাই করতে হচ্ছিলো না। কিন্তু এখন তাও করতে হচ্ছে, অর্থাৎ কেউ জিমেইল ইনভাইট পাঠালেও সেই লিঙ্ক দিয়ে নতুন জিমেইল একাউন্ট বানাতে গেলে আবার মোবাইল ফোন দিয়ে ভেরিফাই করতে হচ্ছে।
ব্যাপারটা অবশ্যই ব্যাবহারকারীদেরকে অত্যন্ত অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। কারন, একাধিক জিমেইল একাউন্ট প্রয়োজন হতেই পারে। যেমন আমার নিজস্ব ৪০'টির বেশি জিমেইল একাউন্ট আছে যা বিভিন্ন কাজে ব্যাবহৃত হয়। আমি এই নালিশ পেয়েই অনেকগুলি জিমেইল একাউন্ট বানাতে বসেছিলাম, এবং আমাকেও একাউন্ট ভেরিফাই করতে বলেছে গুগল। গুগলের এই নিয়ম বদলের পরে অস্বস্তিকর ঘটনাটি সব দেশের ব্যাবহারকারীদের ক্ষেত্রে হচ্ছেনা। এশিয়া মহাদেশের নির্দিষ্ট কিছু দেশে এই সমস্যার দেখা মিলেছে বেশি করে। গুগল কবে যে নিয়ম বদলেছে এবং কেন, কোন কোন দেশের জন্য সেটা জানা যায়নি। আমি এইটুকু জানতে পেরেছি যে প্রচুর জিমেইল একাউন্ট দিয়ে অপরাধমূলক কর্মকান্ড হয়েছে এবং সেইসব ঠেকাতেই এই নতুন ব্যাবস্থা নিয়েছে গুগল। আপনারা এই ধরনের সমস্যার সমাধান করবেন কিভাবে? আপাতত খুব সহজ পদ্ধতি জানাচ্ছি।
আমেরিকায় এই সমস্যা নেই। তাই, আমেরিকাবাসী বন্ধুদেরকে অনুরোধ জানাতে পারেন তারা একটি জিমেইল একাউন্ট খুলে দেবে আপনাকে। কিম্বা, যদি আপনি নিজে প্রক্সি ব্যাবহার করতে পারেন, তাহলে নিজেও অনায়াসে নতুন জিমেইল একাউন্ট খুলে নিতে পারবেন - এতে করে একেবারেই মোবাইল ফোনে ভেরিফাই করতে হবেনা। অন্যান্য যেসব দেশের IP Address ব্যাবহার করলে সমস্যা হবেনা সেগুলি হচ্ছে ফ্রান্স, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, গ্রেট ব্রিটেন ইত্যাদি। এইসব দেশগুলির IP Address ব্যাবহার করলে একাউন্ট ভেরিফাই করতে হবেনা, কিন্তু সেক্ষেত্রে গুগল পরে জেনে যাবে ব্যাবহারকারী কোন দেশে বসে ব্যাবহার করছেন, সেক্ষেত্রে তারা একাউন্ট বাতিল করছেন কিনা সেটা এখনও জানা নেই আমার। ধীরে ধীরে জানা যাবে সব। আপাতত, ইচ্ছেমতো একাউন্ট বানিয়ে রাখুন (কবে কোন কারনে প্রয়োজনে লাগবে তা আমরা কেউ বলতে পারিনা